পুরো নাম মোহাম্মদ মাহমুদুল হক। পেশায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। পড়াশোনা ঢাকা, নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটন। মূলতঃ ছোটগল্প লেখক; পাশাপাশি অনুবাদও করে থাকেন। ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকী, ওয়েবম্যাগ ও বিভিন্ন মিশ্র গল্প-সংকলনে। প্রথম একক ছোটগল্পের সংকলন হ্যাঁ অথবা না এর গল্প প্রকাশিত হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯-এ। ২০১৬-তে প্রকাশিত অনূদিত মিশ্র গল্প সংকলন The Book of Dhaka: A City in Short Fiction এ লেখকের অনূদিত একটি ছোটগল্প রয়েছে। একই বছর প্রকাশিত অনূদিত গবেষণা গ্রন্থ Of the Nation Born: The Bangladesh Papers- এ ৬টি গবেষণা আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে যথাক্রমে কোমা প্রেস, ম্যানচেস্টার ও যুবান পাবলিকেশন্স, দিল্লী থেকে।
সর্বশেষ প্রকাশিত লেখা
স্বপ্নবড়ি
এটা একটা ঘুমে পাওয়া গল্প; স্বপ্নে পাওয়া বলতে চাই না। কারণ, সে রাতে আমি ঘুম আর স্বপ্নের মাঝামাঝি একটা অস্পষ্ট চৈতন্যের ভেতরে ছিলাম। শুইয়ে রাখা মইয়ের মতো একটা টানা রেলপথ দেখেছিলাম; কিছুদূর গিয়েই ওটা আচমকা বাঁক নিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল দৃষ্টিসীমার বাইরে। রেলপথটার...
গল্পটুকরো: হ্যাঁ অথবা না এর গল্প
সিনট্যাক্স-ভাঙা শহর ও একজন গল্পওয়ালা
রাত প্রায় পৌনে বারোটা। কচি ডাবের টাটকা পানির মত ঘাম-ল্যাপটানো সাদা শার্ট গায়ে একটা লোকাল বাসের ঠিক মাঝামাঝি’র ডান কোনার জানালা সিটে বসে আছে সজীব। গন্তব্য শেষ স্টপেজ। মনের সব ঝালগুলো মুড়ির মত মুঠোয় পুরে কারো মুখে ছুঁড়ে মারার তীব্র ইচ্ছে নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে সে। আজকে অফিসে ওর বস অনুপস্থিত একজনের পাওনা ধমকটা সজীবকে উপহার দিয়েছেন। এক প্যাচে পরা শাড়ির মত কায়দা করে ও সূক্ষ্মভাবে তাকে যা বলা হয়েছে তার ভেতরের কালি-ঝুলির পোড়া শরীরটা এরকম-সজীব দায়িত্বজ্ঞানহীনের মত মউজ করে ছুটি কাটিয়েছে এবং একেবারে ইচ্ছে করেই অফিসের ফোন ধরেনি। ফোনটা ধরলে ঐ সহকর্মীটি’র কাছ থেকে মিটিং মিনিটগুলো বুঝে নেওয়া যেত আর এটুকু করলে তার জীবন-যৌবন সংশয়ের মুখে পড়ত না।
বাইরে কানে বাড়ি দিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস ছুটছে ফরফরিয়ে। রাস্তার ডিভাইডারে লাগানো গাছগুলো উল্টোদিকে নুয়ে পড়তে পড়তে আবার সোজা হচ্ছে। আবহাওয়ার একটা ঝোড়ো পরিবর্তনের ইঙ্গিত চারপাশে। এই লাইনটা আপনারা পড়ে ওঠার আগেই জানালার কাঁচে পিন পিন করে তৈরি হতে থাকে কুমারী বৃষ্টির স্বচ্ছ রোগা টিপ।
– Rajib Mahmud
ভাষাপোকা
সারারাত একটানা ঝরে ভোরের আগে আগে ধরে আসে বৃষ্টিটা। বর্ষার বৃষ্টি এটা নয় তবে একে বর্ষার পূর্বসূচক বলা যেতে পারে। সৌম্যদের বাড়িটার দক্ষিণের খালি প্লটটার চারপাশে ইটের বাউন্ডারি দেওয়া। সারারাত ঘাসের গোড়ায় বৃষ্টির পানি জমে জমে ভোরের এইসময়টায় আগা ছাড়িয়েও ইঞ্চি খানেক উপরে উঠে গেছে পানির স্তর। তবে ঘাসগুলো অদৃশ্য হয়ে আছে ভোরের এই ময়লা-চাদর আলোয়। বেশ টুপটুপে একটা পুকুর হয়ে উঠেছে জায়গাটা।
রাতের সেই প্রথম প্রহর থেকেই ভেসে আসছে গ্যাঁ-গোঁ গ্যাঁ-গোঁ ব্যাঙের ডাক। রাত বাড়তে থাকলে অন্যসব শব্দ অস্পষ্ট হওয়ার সাথে সাথে জীবন্ত হতে থাকে ব্যাঙদের এই কোরাস। একটা দারুণ কর্তৃত্বময়তা আছে এই কোরাসে। এর সাথে যোগ হয়েছে হাল্কা বৃষ্টির ফিনফিনে শব্দ। সব মিলিয়ে ঘনঘোর এক ঐকতান। প্রকৃতির নিজস্ব অ্যাকোস্টিক কনসার্ট যেন।
সৌম্যর মনে হলো ওর মগজের ভেতর থেকে কেউ কথা বলছে। তবে কথার ধ্বনিগুলো বড়ো অদ্ভুত। চেনা ভাষাগুলোতে স্বর-ব্যঞ্জন ধ্বনির ঘনবদ্ধ যে বুনোট থাকে এটা সেরকম নয় বরং অনেকটা হাল্কা শিস আর গভীর ওঙ্কারের মিশ্রণ। ধ্বনি উৎস খুঁজতে চারপাশে তাকালে তেমন কিছু চোখে পড়ে না। কিন্তু ও হঠাৎ-ই খুব কাছেই কারও হেসে ওঠার শব্দ শুনতে পায়।
– Rajib Mahmud
ক্যাফে ইনসমনিয়া
এই গল্পের কবি বসে আছেন ক্যাফে ইনসমনিয়ার ইন্টারনেট গেস্ট লাউঞ্জে। এই লাউঞ্জ শুধুমাত্র অনলাইনে অগ্রিম খাবার অর্ডার করা অতিথিদের জন্য। এই অতিথিরা ক্যাফের ওয়েব পেইজে আপলোড করা মেন্যু দেখে নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ী খাবার অর্ডার করে থাকেন। এখানে উল্লেখ্য যে নামে ‘ক্যাফে’ হলেও এটা মূলত একটা সামুদ্রিক মাছের রেস্তোরাঁ ।
ক্যাফের মালিক একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও শখের বেহালাবাদক। তার মনে হয়েছে যে ‘ইনসমনিয়া’র পাশে ‘ক্যাফে’ শব্দটা অজানা যে রাতের কুহক তৈরি করতে পারে ‘রেস্তোরাঁ ‘ শব্দটা তা পারে না, বরং মনে করিয়ে দেয় ভিড় আর ঘামের গন্ধের কথা। এদিকে আবার ‘সি ফুড ক্যাফে’ যোগ করলে নামটার ছিমছাম গড়নটা থাকে না। তাই বোঝাই যাচ্ছে যে এই ক্যাফের নামকরণে অর্থের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে ধ্বনি ও নামের দৈর্ঘ্য। তবে যে বিষয়টা উল্লেখ না করলেই নয় তা হলো মানুষ এই রেস্তোরাঁকে নামে যতটা না চেনে তার চেয়ে অনেক বেশি চেনে এর অনন্য এক বৈশিষ্ট্যের কারণে আর সেটা হলো-
এখানে আসা অতিথিরা রান্না হওয়ার আগে তাদের অর্ডার করা মাছটার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে নিতে পারেন-কাটাতে পারেন একান্ত কিছুটা সময়।
– Rajib Mahmud
নতুন লেখার আপডেট পেতে চাইলে,